রেভিনিউ vs প্রফিট: শুধু আর্ন করা নয়, লাভ করাও জরুরি আপনার ব্যবসার জন্য

Spread the love

ধরুন, আপনি একটি বিজনেস শুরু করেছেন, প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার রেভিনিউ হচ্ছে, যা দেখে আপনি বেশ আশাবাদী। কিন্তু মাসের শেষে হিসাব মেলাতে গিয়ে বুঝলেন, লাভে পৌঁছানো এখনো হচ্ছে না। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই হতাশার, তাই না?

এই গল্প শুধু আপনার নয়। বড় বড় কোম্পানিগুলোও প্রথম দিকে এই সমস্যায় পড়েছে, যারা রেভিনিউয়ের বড় বড় নাম্বারগুলো দেখে এগিয়েছে, কিন্তু পরে ঠিকই টের পেয়েছে যে তাদের রেভিনিউ মডেল লংটার্মে ইফেক্টিভ না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে UBER, AirBNB, এবং Flipcart এর কথা। বছরে বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ থাকার পরেও এই কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর প্রফিট করতে ব্যর্থ ছিল।

একইভাবে, WeWork অনেক রেভিনিউ আর্ন করলেও ব্যবসায়িক টিকে থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়ে। শুধু ইনকাম দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগার ফলে তারা আসল খরচ এবং লাভ নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করতে পারেনি। অন্যদিকে, আমাজন একটি আলাদা উদাহরণ। কোম্পানিটি বছরের পর বছর ইচ্ছাকৃতভাবে লস করেছে, কারণ তাদের বিজনেসটা ছিল Well planned যেটা থেকে একটা ইন দ্যা লং রান লাভের ব্যাপারে যথেষ্ট কনফিডেন্ট ছিল। তারা জানত যে, বড় লাভের জন্য প্রথমে বড় পরিমাণে বিনিয়োগ ও রিস্ক নিতে হবে।

তাহলে, ব্যবসার প্রফিট এনালাইসিস কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

শুধু রেভিনিউ মডেল তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, কারণ আপনার আসল উদ্দেশ্য তো হচ্ছে লাভ করা। লাভের চিন্তা ছাড়া ব্যবসা চালাতে থাকলে, ভবিষ্যতে সেই ব্যবসা টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

  •  রেভিনিউ হলো আপনার ব্যবসার সব আয়ের মুল অঙ্ক, যা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল করার মাধ্যমে আপনি পান। নাম্বার হিসেবে এটি বড় দেখাতে পারে, কিন্তু খরচ বাদ দিয়ে প্রফিট বের করতে না পারলে ব্যবসা আল্টিমেটলি ক্ষতির দিকে যাবে।
  • প্রফিট বা লাভ আসে রেভিনিউ থেকে সব ধরণের খরচ বাদ দেওয়ার পর। এই খরচের মধ্যে থাকে, এমপ্লয়ী স্যালারী, ইউটিলিটি বিল, raw material cost সহ অন্যান্য খরচ যার আপনার ব্যবসাভেদে ভিন্ন হতে পারে। এটাই সত্যিকারের লাভ/লস।

কিছু বাস্তব উদাহরণ ও পরিসংখ্যান

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নতুন স্টার্টআপগুলোর প্রায় ৭০% থেকে ৮০% প্রথম তিন বছরের মধ্যে লাভে আসতে ব্যর্থ হয়। তাদের বেশিরভাগই ব্যবসায়িক মডেলে প্রফিট নিয়ে যথাযথ এনালাইসিস না করে শুধু রেভিনিউয়ের দিকে মনোযোগ দেয়।

অনেক বড় বড় স্টার্টআপ যেমন স্ন্যাপডিল এবং ফ্লিপকার্ট, যেগুলো বড় পরিসরে রেভিনিউ অর্জন করেছে, কিন্তু ব্রেকইভেন পয়েন্টে পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত এগুলোও বিক্রি হয়ে যায় বা অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে মার্জ হয়ে যায়। এমনকি বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও লাভ নিয়ে লং টার্ম প্ল্যানিং এর অভাবে সাফল্যের স্বপ্নটি স্বপ্নই থেকে যায়।

তাহলে, ব্যবসা শুরু করার আগে আপনি কী করবেন?

আপনার ব্যবসার জন্য রেভিনিউ জেনারেটিং মডেল তৈরি করার পাশাপাশি প্রফিট জেনারেটিং মডেলও তৈরি করা উচিত। এক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হতে পারে:

  1. আমার রেভিনিউ মডেল প্রফিট তৈরি করতে পারবে কি? শুধু সেলের মাধ্যমে আয় করতে পারলেই লাভ হবে না, এর জন্য খরচ কমিয়ে লাভ বাড়াতে হবে।
  2. কতটুকু খরচের প্রয়োজন হবে? Operational cost থেকে শুরু করে মার্কেটিং, ম্যাইন্টেনেস সহ সবকিছুর কস্টিং সঠিকভাবে প্ল্যান করে সাজাতে হবে । এতে লাভ করার পসিবিলিটি বাড়বে।
  3. ব্রেকইভেন পয়েন্ট কতদিনের মধ্যে আসবে? লাভের আগে প্রথম ধাপে এই পর্যায়ে পৌঁছানো দরকার, যেখানে ব্যবসায় অন্তত ক্ষতি ছাড়া নিজের খরচ উঠাতে পারেন।

আপনি কি কোনো ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন, করলে তা কিসের ব্যবসা ? এই ব্যবসার প্রফিট জেনারেটিং মডেল নিয়ে আপনি আশাবাদী তো ? নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারেন আমাকে। 🙂 

ভালো থাকবেন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 4 =