দুনিয়া যখন থেকে বুঝতে শুরু করসি, তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা সুপ্ত বাসনা ছিল বিজনেস করার। আমার মতো হয়তো অনেকেরই এই ধরণের আকাংখা লালন করেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, একটা বিজনেস হোক তা যত ছোট কিংবা বড়, তা রান করতে নিজের কন্টেক্সট এবং স্কিলের বাইরেও অনেক কিছু জানা লাগে, শ্রম আর ইনভেস্টমেন্ট তো লাগেই। এজন্যই দরকার হয়ে পড়ে কারো সাথে পার্টনারশীপে যাওয়ার। কিন্তু এক্ষেত্রে আবার সমস্যা হচ্ছে, যাকে আমি পার্টনার করব, সে আসলেই তার উপযুক্ত কিনা সেটা বুঝা। অনেক সময় শুধুমাত্র ভুল পার্টনারশীপের জন্য ব্যবসা লাটে উঠে – এমন ঘটনা অহরহ।
তাই, আজকের এই পর্বে আমি বিজনেস পার্টনার চুজ করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে নজরে আনা উচিত তা নিয়ে একটু বকবক করব। 🙂
বিজনেস পার্টনার চুজ করার ক্ষেত্রে কিছু কমন বৈশিষ্ট্য সবার থাকার উচিত, যেগুলা আমরা সবাই জানি যেমন, বিশ্বস্ততা, প্রব্লেম সলভিং এবিলিটি ইত্যাদি। এসব পয়েন্ট তো কমন এবং অলরেডী আপনারা জানেন। তাই এগুলো নিয়ে আর কিছু লিখলাম না। আমি কথা বলব সেগুলো নিয়ে, যেগুলো নিয়ে আমরা সচরাসচর চিন্তা করি না কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
শুরু করা যাক তাহলে !
আবেগ থেকে বের হতে হবেঃ
এটা সবার আগে দরকার। আমাদের মধ্যে অনেকেই শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের আত্মীয়স্বজনের সাথে পার্টনারশীপ করার চিন্তা করে। এই ধারণা থেকে যে, তারা তো আপন লোক, তারা তো অন্তত বাটপারি করবে না। কিন্তু ভাই আমার, পার্টনার বানানোর ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততাই একমাত্র ক্রাইটেরিয়া যদি হয়, তবে মসজিদের ঈমামকেই পার্টনার বানাচ্ছেন না কেন ? 🙂 বলতে চাচ্ছি, বিশ্বস্ততাই একমাত্র জিনিস নয়, এর বাইরেও আরো কিছু লাগবে যেগুলোর ব্যপারে পরবর্তী পয়েন্টগুলোতে উল্লেখ করছি।
গায়ে বাতাস লাগানোর জন্য বিজনেস করতে চায় যারাঃ
আমাদের জাতিগত একটা সমস্যা হচ্ছে, আমরা আরামে থাকতে চাই। ৯-৫ জব করা অনেককেই দেখবেন বিজনেস করতে চায়। যদি কারণ জিজ্ঞেস করেন বলবে, ধুর ! এই বন্দী জীবন ভাল্লাগে না। কোনো স্বাধীনতা নাই। ৯টা থেকে ৫টা একই রকম লাইফ, জীবনটা ত্যানা হয়ে গেসে।
এই ধরণের পাব্লিক থেকে নিজেকে বাঁচান। এরা আপনার ব্যবসার পার্টনার হলে নিজেকে রাজা ভাববে আর বলবে, কর্মীরা তো কাজ করছে, আমার কেন কাজ করা লাগবে ! এবার আপনি নিজেই ভাবেন, এদের দিয়ে কি ব্যবসা হবে ?
ব্যবসা করতে চাওয়ার কারণ হিসেবে যদি কারো ধারণা হয় এমন যে, ভাই ! ব্যবসাতেই বরকত। জব করে আপনি যতই কামান, তা আপনার ইফোর্টের বিচারে worth it না। তাছাড়া অর্থনৈতিক শৃংখল থেকে মুক্তির দরকার আছে। চাকরীতে তা সম্ভব নয় – বুঝতে হবে, he is a good fit.
হাইপে উঠে আবার সহজেই ন্যাতায়ে যায় যারাঃ
ভাই, চলেন এই বিজনেস শুরু করি!
ভাই চলেন, ঐটা শুরু করি। আমি আছি ভাই। আমি থাকমু ভাই। যেমনেই হোক করমু ভাই। কোনো কথা নাই। খালি ধরমু, আর কোপামু !
কিছুদিন পরে খোঁজ নিতে যান, দেখবেন, আর খুঁজে পাবেন না। বলবে, ভাই, আজকে এই কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ঐ প্রব্লেম ছিল, হেন ছিল তেন ছিল।
কিছু পাব্লিক আছেই এমন, যারা এভাবে একটা হাইপ ক্রিয়েট করে। পরে নিজেরাই ন্যাতায়ে পড়ে। এমন কোনো ইনিশিয়েটিভ দেখবেন না, যেটা তারা শুরু করসে, বা শুরু করলেও কন্সিস্টেন্সী ধরে রাখসে। এরা আপনার ব্যবসার বারোটা বাজাবে। এদের ইনিশিয়াল হাইপ আর স্পিরিট দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। সাবধান !
ভোরবেলায় দিন শুরু করাঃ
Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy and wise – ছোটবেলায় এই rhyme টা পড়েছি। এটা কিন্তু কোনো নিছক লোককথা না। এটা বাস্তবসম্মত একটা উপদেশ। যত মিলিয়নিয়ার, বিলিয়নিয়ার, সাকসেসফুল পার্সন যাদের আপনি দেখেন বা ফলো করেন, তাদের দিনটা কিন্তু শুরু হয় ভোরে। আপনি বিজনেস ম্যাটারিয়াল কিনা, তা বুঝার একটা সহজ উপায় হচ্ছে, কয়টায় আপনার দিন শুরু হয় আর আপনি কয়টায় কাজ শুরু করেন তা দেখা। তাই পার্টনার হিসেবে আপনার যাকে পছন্দ তার টাইম টেবিলও চেক করুন, তার দিন কখন শুরু হয় দেখুন। হ্যা, সে যদি চাকরীজীবী হয়, তাকে তখন এমনিতেও সকালেই উঠতে হবে। কিন্তু, ছুটির দিনে সে কখন উঠে দেখুন (এখানে দেখতে বলা মানে তার সাথে গল্পে গল্পে প্রসংগক্রমে ইনফো কালেক্ট করতে বলা হচ্ছে, বেডরুম মনিটরিংয়ের কথা ভাববেন না আবার 😛 )। যদি, ছুটির দিনে একটু আরামে সকালে ঘুমানোর পাব্লিক সে হয়, তবে পার্টনার বানানোর ক্ষেত্রে আরেকবার ভাবা উচিত।
সময়জ্ঞানঃ
আমি পার্সোনালি এই জিনিসটার ব্যাপারে খুব সেন্সিটিভ, বিশেষ করে কাজের ক্ষেত্রে। এই জায়গায় এসে বেশিরভাগ বাংগালী ধরা খায়। কারণ, কেন জানি না, বেশিরভাগ বাংগালীরই সময়জ্ঞানের অনেক অভাব !
যাকে পার্টনার বানানোর চিন্তা করছেন, তার সাথে ২/১ বার ইনফর্মালি মিট করুন অথবা কোনো ইভেন্টে ইনভাইট করুন। তার সময়জ্ঞান সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন
কম্যুনিকেশনঃ
আপনার পটেনশিয়াল পার্টনারের সাথে কোনো একটা প্ল্যান বা কোনো ইভেন্ট করতে যাচ্ছেন। মাঝপাথে ট্যাঁর প্ল্যান চেইঞ্জ হল বা সে ইভেন্টে থাকতে পারছে না। এমতাবস্থায়, সে আপনাকে আপডেট করছে কিনা এ ব্যাপারে, দেখুন। যদি এখানে lackings দেখতে পান তবে তাকে বাদ দিন।
আমার পার্সোনাল অপিনিয়ন, সময়জ্ঞান এবং কম্যুনিকেশন – এই দুইটা জিনিস থাকা অত্যন্ত জরুরী। অন্যগুলায় কমতি হলেও এই জায়গায় No mercy !
ভিশনারিঃ
আপনার পার্টনারকে ভিশনারি হতে হবে। তা না হলে, আপনার ভিশন তাকে দেখাতে পারবেন না। তাকে সেইম পেইজে আনতে পারবেন না। সেইম পেইজে না থাকলে ব্যবসা আগাবে কিভাবে। দেখা যাবে, প্রতিটা স্টেপে সে ভেটো দিবে। মাঝপথে লেগে যাবে ক্যাচাল। প্রতিটা মোমেন্টে পার্টনারকে বোঝানোতে এক্সট্রা ইফোর্ট দেয়া লাগলে ব্যবসায় ইফোর্ট দিবেন কখন ?
মার্কেটিং এবং সেলস সেন্সঃ
এখানে মার্কেটিংটা এডেড বোনাস। না থাকলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু সেলসের কিছু স্কিল থাকা জরুরী। সে যদি আপনার কাছে নিজেকে বেস্ট ফিট বলে কনভিন্স করতে পারে, তার মানে তার সেলস সেন্স কিছুটা হলেও আছে। 🙂
৯-৫ মেন্টালিটি থেকে বের হবার মানসিকতাঃ
ব্যবসা শুরু করলে ৯-৫ এর মত নির্দিষ্ট সময় কাজ করেই শেষ, আর কাজ নাই – এই ধরণের চিন্তা যদি সে করে থাকে, যদি সে এটা মানতে না পারে যে, ২৪/৭ ই তাকে eveready থাকতে হবে, টাইমলিমিটে বাঁধা যাবে না তার কাজের পরিধিকে – তবে তা প্রব্লেম হয়ে দাঁড়াবে আপনার জন্য।
চেইঞ্জকে এডাপ্ট করার মানসিকতা, এবং সেই চেইঞ্জের সাথে সাথে নিজেকেও এডজাস্ট এবং ট্রেইন করার চেষ্টাঃ
দুনিয়া পরিবর্তনশীল, আগের চেয়েও দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে সবকিছু। চিন্তা চেতনা, ধ্যান ধারণা, সাইকোলজি, টেকনোলজী, কাস্টমারের চয়েস, পছন্দ, রুচি, ধরণ ইত্যাদি। সেই সাথে চেইঞ্জ হচ্ছে, ব্যবসার প্রসেসও, মার্কেটিং, স্ট্র্যাটাজি, সেলস সিস্টেমও। এটা যদি মানতে না পারে আপনার পটেনশিয়াল পার্টনার, এবং তার সাথে নিজেকে এডজাস্ট করার, এবং তদানুযায়ী নিজেকে ট্রেইন করার মানসিকতা যদি না থাকে, তবে আগাতে পারবেন না। নাবিস্কো, কেয়া, নকিয়া – এরা কিন্তু এসব চেইঞ্জকে এডাপ্ট করেনি বলেই হারায়ে গেসে।
Let’s do it মেন্টালিটিঃ
আইডিয়া সবাই দিতে পারে, কিন্তু এক্সিকিউট সবাই করতে পারে না। আবার এক্সিকিউট করতে গেলে কেমনে হবে, আদৌ হবে কিনা, যদি না হয়, যদি এটা হয়, যদি ওটা হয় – ইত্যাদি চিন্তা করে করে শেষ পর্যন্ত শুরুই করে না, এমন পাব্লিকও প্রচুর। আপনি পার্টনার হিসেবে এমন একজনকে নিতে হবে যে Whatever the situation is , let’s make it happen – এই মানসিকতায় বিশ্বাসী !
হ্যা, risk and problem assessment করাটা জরুরী। কিন্তু তার মাত্রা এবং সম্ভাবনাও বিবেচনায় নিতে হবে। যদি rarest possible odd case গুলো নিয়েও মাত্রাতিরিক্ত এনালাইসিস করা হয়, তবে কোনো বিজনেসই মাঠে নামানো পসিবল না।
সহজ কথায় বলতে গেলে, উদ্যোগী মানসিকতার হতে হবে আপনার পার্টনারকে।
নেটওয়ার্কিংঃ
এটা একটা nice to have টাইপের এট্রিবিউট। আপনার পার্টনারের যদি নেটওয়ার্কিং ক্যাপাবিলিটি ভালো হয় তবে বুঝতে হবে তার কনভিন্স করার এবিলিটি ভালো। এটা ইন দ্যা লং রান ভালো কাজে দেয়। ভবিষ্যিতে যদি আপনার বিজনেসের জন্য ফান্ড রেইজ করার বা ইনভেস্টমেন্ট নেয়ার দরকার হয়, তবে এক্ষেত্রে সে হেল্পফুল রোল প্লে করতে পারে।
Find a leader , not a Boss:
বস আর লিডারের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য আছে। বস তদারককারী, অন্যদিকে leader is someone who leads from the front. বস কখনো মেন্টর হতে পারে না, অন্যদিকে লিডার মানেই মেন্টর ! বস কখনো ব্যর্থতাকে নিজের ঘাড়ে নেয় না, কিন্তু সাকসেসে ভাগ বসাতে চায়।
আপনার ব্যবসা যখন বেবি স্টেইজে থাকে, তখন কিন্তু আপনার দরকার একজন লিডার বা মেন্টর ! বস পালার মত এফোর্ডেবিলিটি আপনার ঐ স্টেইজে থাকে না। তাই আপনার পটেনশিয়াল বিজনেস পার্টনার লীডারশীপ মেন্টালিটির কিনা এটাও দেখে নেবেন।
আপনার বিজনেসের জন্য যাকে আপনি পার্টনার বানাবেন বলে ভাবছেন তার মাঝে এসব এট্রিবিউট আছে তো ?
আপনার যদি কোনো বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বা পার্টনারশিপ গাইডলাইন নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা থাকে, তবে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
I am really willing to talk with you about your next big move. 🙂