আমাদের বিল্ডিং এর একটি বাচ্চা আছে, ক্লাস টু এ পড়ে। কোন তলায় থাকে সে অবশ্য জানা হয়নি যদিও। কিছুদিন আগে তার বাবা তাকে একটি সাইকেল কিনে দেয়। বাচ্চাদের সাইকেল নয়, ফুলসাইজ সাইকেল। ওটা নিয়ে তাকে মাঝে মাঝেই গ্যারেজে চালিয়ে বিকেলটা কাটাতে দেখি। আমি সাইকেলে অফিসে আসা যাওয়া করি, বাসায় আসার সময় দেখা হয় তাকে সাইকেল নিয়ে চালাতে/খেলতে। যাহোক, মাঝে মাঝে দেখা হওয়ার সুবাদের হালকা পাতলা কথা হয়, কুশল বিনিময় টাইপ। আমাকে ভাইয়া ডাকে, যদিও আমার তার চেয়ে কিছুটা কমবয়সী ছেলে আছে, তবে ভাইয়া ডাক শুনতে একেবারে খারাপ লাগে না।
আজকে অফিস থেকে ফিরে সাইকেলটা গ্যারেজে পার্ক করতে করতে তাকে দেখতে পেলাম, সাইকেল চালাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে , পরীক্ষা চলে কিনা ইত্যাদি। জবাবে জানাল তার পরীক্ষা চলছে। এরপর কথা প্রসংগেই বললো, ” ভাইয়া, আগের পরীক্ষাতে সেকেন্ড হয়েছিলাম।”
আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কি বলতেন ? হয়তো বলতেন, “বাহ ! ভালো তো ! এভাবে পড়াশুনা চালিয়ে যাও, তোমাকে ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে, সবার চেয়ে টপে থাকতে হবে” জানিনা এভাবে বলাটা কতটা ঠিক হত , তবে আমি এভাবে বলিনি। বরং তার ভালো রেজাল্টের জন্য তাকে এপ্রিশিয়েশন দিয়ে বললাম, “ভালো তো ! তবে একটা কথা মনে রেখ, রেজাল্ট ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তুমি যা শিখছ যেনো সঠিকভাবে এবং ভালোভাবে শিখ” – সে মাথা নেড়েছে যদিও তবে জানিনা কথাটির গুঢ় অর্থ সে বুঝসে কিনা। হয়তো আরো ভালোভাবে বুঝিয়ে বললে ভালো হত, কিন্তু সময় ছিল না। বাসায় যাওয়ার তাড়া ছিল। তবে আমি একটা ব্যাপার সব সময় অনুভব করি , আর তা হল, “তোমাকে টপ/ফার্স্ট হতে হবে” – এটা বলার মাধ্যমে তাকে তার সমবয়সী সব মানুষের সাথে প্রতিযোগীতায় নামিয়ে দিচ্ছি। সবাইকে যদি সে প্রতিযোগী দেখে, তবে সহযোগী হবে কে ? সে তো একা হয়ে যাবে চলার পথে। কিন্তু মানুষ তো একা বাস করার প্রাণী না। সব ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতা ভালো নয়, এটা মানুষকে একা করে দেয়। তার মধ্যে অন্যের ব্যপারে হিংসা করার প্রবণতা তৈরি করে। অন্যের ভালোতে এপ্রিশিয়েশন দেয়ার বদলে মনে মনে পরশ্রীকাতর হয়ে ওঠে সে। তাই প্রতিযোগীতা কারো সাথে না করে যেন তা হয় নিজের সাথে , এজন্যই বলা উচিত – “তোমাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, আরো বেটার হতে হবে, নিজেকে উন্নত করতে থাকতে হবে সবসময়”